একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পোদ্যোক্তার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য একদিকে যেমন উদ্যোগী মানুষের প্রয়োজন অন্যদিকে প্রয়োজন শিল্পোদ্যোগ পরিবেশের। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ । উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রের ন্যায় শিল্পোদ্যোগেও অনেক সমস্যা দেখা যায় । নিম্নে বাংলাদেশে শিল্পোদ্যোক্তা বা ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়নের সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. উদ্যোগ বিষয়ক শিক্ষার অভাব (Lack of entrepreneur related education): শিল্প বা ব্যবসায় উদ্যোগে সাধারণ জনগণকে আগ্রহী করে তোলার জন্য এদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো শিক্ষা কার্যক্রম নেই । কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগও সীমিত। সাধারণ শিক্ষায় ব্যবসায় উদ্যোগ, আত্মকর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয় নেই বললেই চলে । বাণিজ্য শিক্ষায় এ বিষয়টা ইদানিং অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তাতে ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ নেই । ফলে ব্যবসায় উদ্যোগের ক্ষেত্রেও এটি বড় বাধা হয়ে রয়েছে ।
২. প্রশিক্ষণের অভাব ( Lack of training) : শিল্পোদ্যোগে মানুষকে উৎসাহী ও নতুন উদ্যোক্তাদের তাদের উদ্যোগে সফল করতে যে প্রশিক্ষণ সুবিধার প্রয়োজন বাংলাদেশে তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যুব অধিদপ্তরসহ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান এ লক্ষ্যে কিছু কাজ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। দু-একটা এনজিও কিছু কাজ করলেও তা যথেষ্ট নয় ।
৩. সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার অভাব (Lack of Govt, assistances) : বাংলাদেশে শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা নেই বললেই চলে। খাতা-কলমে প্রোগ্রাম থাকলেও ব্যবসায় উদ্যোগ সফল করতে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আনতে সরকারের যে ধরনের উৎসাহমূলক, সমর্থনমূলক ও সংরক্ষণমূলক সেবা সহায়তার প্রয়োজন তার যথেষ্ট ঘাটতি বিদ্যমান।
৪. মূলধনের অভাব (Lack of capital) : ব্যবসায় বা শিল্পোদ্যোগের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো পর্যাপ্ত মূলধনের ব্যবস্থাকরণ । বাংলাদেশের মানুষের সঞ্চয়ের সামর্থ্য কম হওয়ায় একদিকে যেমনি উদ্যোক্তার নিজস্ব মূলধন কম থাকে, তেমনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মূলধন সরবরাহে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ দেখায় না । কর্মসংস্থান ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এক্ষেত্রে কিছু কাজ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত ।
৫. আইনগত জটিলতা (Legal complexity) : আমাদের দেশে শিল্পোদ্যোগ প্রক্রিয়ায় প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে একজন উদ্যোক্তা নানান আইনগত ও বৈষয়িক জটিলতার সম্মুখীন হয় । যেমন- ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য বিভিন্ন লাইসেন্স সংগ্রহে, ঋণ গ্রহণে, সরকারি সেবা সুবিধা পেতে জটিলতা ইত্যাদি । এ সকল জটিলতা দূর করতে না পারলে এদেশে শিল্পোদ্যোগ কার্যক্রম কখনও ত্বরান্বিত হবে না ।
৬. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব ( Lack of political stability) : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পোদ্যোগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজন । স্থিতিশীল রাজনীতিতে জনগণ স্বচ্ছন্দে ব্যবসায়- বাণিজ্য করতে পারে । ফলে একজন ব্যবসায়ী নতুন নতুন চিন্তা-চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক অঙ্গন প্রায় সব সময়ই উত্তপ্ত থাকে যা শিল্পোদ্যোগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৭. প্রচার-প্রচারণার অভাব (Lack of publicity) : ব্যবসায় উদ্যোগকে উৎসাহিত ও এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও আগ্রহ সৃষ্টির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা থাকা দরকার তারও যথেষ্ট অভাব এ দেশে লক্ষণীয়। গণমাধ্যমগুলোতে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, দুর্ঘটনা, হরতাল রাজনৈতিক বক্তব্য- বিবৃতি যেভাবে প্রাধান্য পায় ভালো খবর, ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ও সফল উদ্যোক্তাদের সাফল্য গাঁথা সেভাবে প্রচারিত হয় না । ফলে নতুনদের চিন্তার জগতে ব্যবসায় উদ্যোগ নাড়া দিতে পারছে না ।
আরও দেখুন...